Fruit Crops Breeding & Multiplication Centre

FRUIT CROPS ADVISORY SERVICES TO FARMERS

RIDF- (XXIII) PROJECT

Crop Calender

আম

শ্রেণীবিন্যাস

বৈজ্ঞানিক নাম: ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা       উত্স: দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া

পরিবার: অনাকারদিয়াসেই                ক্রোমোজোম সংখ্যা: ২ন= ৪০

 

ভূমিকা:

আম, কাজু পরিবারের সদস্য এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যাপকভাবে চাষ করা ফল এবং দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে মায়ানমার এবং ভারতের আসাম রাজ্যের আদিবাসী বলে বিবেচিত। আম ভিটামিন এ, সি এবং ডি এর সমৃদ্ধ উৎস।

সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালের জুনে শেষ হওয়া ফসল বছরে দেশে আমের উৎপাদন ৪.২৪ শতাংশ বেড়ে ২১.১২ মিলিয়ন টন হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। 2019-20 শস্য বছরে (জুলাই-জুন) ‘ফলের রাজা’ আমের উৎপাদন 20.26 মিলিয়ন টন ছিল

 

জলবায়ু

আম গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুর সাথে বেশ মানিয়ে যায়। ফুল ফোটার সময় উচ্চ আর্দ্রতা এবং মেঘলা আবহাওয়া অনুকূল নয় কারণ এগুলো পরাগায়ন ও ফলের সেটকে প্রভাবিত করে এবং রোগকে উৎসাহিত করে। ফুল আসার সময় বৃষ্টি ফসলের জন্য ক্ষতিকর।

 

মৃত্তিকা

পাললিক এবং বেলে লোম আম চাষের জন্য আদর্শ। সঠিকভাবে সার দিলে এটি চালকা এবং ডাবের মতো হালকা মাটিতেও জন্মানো যায়। ক্ষারীয় ও লবণাক্ত মাটি এড়িয়ে চলতে হবে। আমের জন্য সবচেয়ে আকাঙ্খিত মাটি হতে হবে মাঝারি টেক্সচারের, গভীর (2 থেকে 2.5 মিটার) ভালোভাবে নিষ্কাশন করা কম পানির টেবিল (সব ঋতুতে 180 সেন্টিমিটারের নিচে) এবং এর pH রেঞ্জ 6.0 থেকে 7.5। আম উচ্চ মাটির লবণ সহ্য করতে পারে না (0.05% এর বেশি নয়)।

 

জাত :

জলদি—গোলাপখাস, পেয়ারাফুলি, সফদর পসন্দ, বোম্বাই ইত্যাদি।

মাঝারি—হিমসাগর, কিষেনভোগ, রানীপছন্দ, আলফাসো ইত্যাদি।

নাবি—ল্যাংড়া, ফজলী, আম্রপালি, মল্লিকা, চৌসা, লক্ষ্মণভোগ, আশ্বিনা ইত্যাদি।

হাইব্রিড আম : আম্রপালি (দশেরী ×নীলম), মল্লিকা (নীলম ×দশেরী),

রত্না (নীলম × আলফাসো), সিন্ধু (রত্না × আলফান্‌সো), অর্কপুনীত (আলফান্‌সো × বঙ্গনাপল্লী)

আম্রপালি : আমের অনিয়মিত ফলন সমস্যা দূর করে নিয়মিত ফলন পাওয়ার জন্য কিছু সংকর জাতের উদ্ভাবন হয়েছে। দিল্লির কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পিতা হিসেবে দক্ষিণ ভারতীয় জাত ‘নীলম’ ও মাতা হিসেবে উত্তর ভারতীয় জাত ‘দশেরীর’র মধ্যে সংকরায়ন ঘটিয়ে ‘আম্রপালি’ জাতটি উদ্ভূত হয়েছে। আম্রপলির গাছ ছোটো, ফল লম্বাটে (গড় ওজন ০০ গ্রাম), ছোটো নাকযুক্ত ও সুস্বাদু, নিয়মিত প্রচুর ফলন দেয় এবং দেরিতে পাকে। জাতটি এ রাজ্যের উপযোগী। জাতটি পেয়ারা গাছের চেয়ে ছোটো হওয়ায় বাড়ির পাশে লাগানো যায়। আবার রোপণের দুরত্ব (৬ মি. × ৬ মি.) অন্য জাতের তুলনায় অর্ধেক হওয়ায় একই জায়গায় দ্বিগুণ সংখ্যক গাছ লাগানো যায়। একটা ১০ বছরের গাছে গড় ফলন ১০০ কেজি। দেরিতে পাকার ফলে বাজারে বেশি দাম পাওয়া যায়। তিন বছরের একটা গাছে কমপক্ষে ১৫০টি আম পাওয়া যায়। চারা বসানোর ১ম বছরে মুকুল এলে ভেঙে দিতে হয়। ২য় বছরে গাছে ১০০-র মতো পাতা থাকলে ১০টি আম নেওয়া যেতে পারে। ৩য় বছরে মুকুল না ভেঙে সব ফলন নেওয়া যায়।

 

মল্লিকা : মল্লিকাও আম্রপালির মতো সংকর জাত। তবে এক্ষেত্রে পিতা হিসেবে ‘দশেরী’ এবং মাতা হিসেবে ‘নীলম’ জাত দুটির মধ্যে সংকরায়ন ঘটানো হয়েছে। দিল্লির ভারতীয় কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে জাতটি উদ্ভাবিত। মল্লিকার গাছ ছোটো, ফল ডিম্বাকার লম্বাটে এবং ফলের নীচের অংশ খাঁজ সৃষ্টি হয়ে নাকের আকৃতি নিয়েছে। ফলের ওজন ৩০০-৬০০ গ্রাম, ৭২.৬ শতাংশ শাঁসযুক্ত। পাকা আম উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের মিষ্টি ও সুস্বাদু।

পাকার অনেক দিন পর পর্যন্ত শক্ত থাকায়, দুরান্তে পরিবহণযোগ্য। মল্লিকা জাতটি নিয়মিত ফল দেয়। নানা আবহাওয়ায় চাষযোগ্য, ফলঝরা প্রতিরোধী। ছোটো আকৃতির গাছ হওয়ায় বাড়ির পাশে এবং একই জায়গায় দ্বিগুণ সংখ্যক গাছ লাগানো যায়।

 

 

চারা বসানোর দূরত্ব:

১১ মিটার × ১১ মিটার দূরত্বে ১× ১×১ মি. মাপের গর্ত। আম্রপালি, মল্লিকা—৬ মিটার × ৬ মিটার দূরত্বে ১ × ১ × ১মি. মাপের গর্ত।

 

সারপ্রয়োগ:

প্রতিটি ফলন্ত গাছে বর্ষার আগে ৫০ কেজি জৈবসার ও ১ কেজি না, (২.২ কেজি ইউরিয়া) এবং বর্ষার পরে ৫০ কেজি জৈবসার, ৭৫০ গ্রাম ফ. (৪.৬ কেজি সি.সু. ফসফেট) ও ১ কেজি পটাশ (১.৬৫ কেজি মিউ, পটাশ) দেওয়া হয়। ১ বছর বয়সের প্রতি গাছে বর্ষার আগে ও পরে প্রতিবারে ২০ কেজি জৈবসার, ৫০ গ্রাম না. (১১০ গ্রাম ইউরিয়া), ২৫ গ্রাম ফ. (১৫৫ গ্রাম সি. সু. ফসফেট) ও ২৫ গ্রাম পটাশ (৪০) গ্রাম মিউ. পটাশ) দেওয়া হয়। বয়সের সঙ্গে সারের মাত্রা বেড়ে ফলন্ত গাছের সমান হবে। এ ছাড়া ৫০ গ্রাম জিঙ্ক সালফেট, ২০ গ্রাম বোরাক্স ও ২ গ্রাম অ্যামোনিয়াম মলিবডেট জৈবসারের সঙ্গে মিশিয়ে ২-৩ বছর অন্তর গাছ প্রতি প্রয়োগ করা হয়।

 

পরিচর্যা:

আমের অনিয়মিত ফলন একটা বড়ো সমস্যা। এ সমস্যার অনেকটা সমাধান কিছু পরিকল্পনা ও পরিচর্যার মাধ্যমে করা হয়। হিমসাগর, সফদর পসন্দ জাতে ফলন অনিয়মিত থাকলেও অন্যান্য জাতের মতো প্রকট নয়। তাই বাগানে আম্রপালি, মল্লিকা, হিমসাগর, সফদর পসন্দ জাতের চারা লাগানো ভালো। সঠিক দুরত্ব মেনে একটি জাতের পরিবর্তে বাগানে ২-৩টি জাতের গাছ লাগানো উচিত। সেইসঙ্গে সঠিক পরিমাণে, সঠিক সময় ও পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ, ৩-৪ সপ্তাহ অন্তর সেচ প্রয়োগ, শুকনো, রোগাক্রাও ডালপালা ও পরগাছা ছাঁটাই এবং সঠিকভাবে রোগ-পোকা দমন করা উচিত। এ ছাড়া আমের অনিয়মিত ফলন দূর করতে অর্থাৎ কম ফলনের বছরে অক্টোবর মাসে গাছের গোড়ায় প্যাক্লোবুট্রাজল (২৩ শতাংশ এস.সি.) প্রয়োগ করা হয়। অর্থাৎ বেশি ফলনের বছরের ফল পাড়ার পরে ওষুধটি প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স অনুসারে গাছের গোড়া থেকে ১-৫ ফুট দূরে ২-৪ ইঞ্চি মাটি খুঁড়ে প্রয়োজনীয় ওষুধ ৫-১০ লিটার জলে গুলে প্রয়োগ করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। ৭-১৫ বছরের গাছে ১০ মিলি., ১৬-২৫ বছরের গাছে ১৫ মিলি ও ২৫ বছরের বেশি বয়সের গাছে ২০ মিলি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। হাল্কা মাটিতে কম ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। তা ছাড়া আমের গুটি ধরার ঠিক পরেই একবার এবং ১৫ দিন পরে আর একবার আলফা ন্যাপথালিন অ্যাসেটিক অ্যাসিড (২০ মিগ্রা. প্রতিলিটার জলে) স্প্রে করলে অসময়ে গুটি ঝরা কমানো যায়। প্রয়োজনবোধে অণুখাদ্যের দ্রবণ স্প্রে করেও আমের গুটি ঝরা বন্ধ করা যায়। গুটি ধরার পর বৃষ্টি না হলে শুধুমাত্র জল স্প্রে করে ফলের বোঁটা শক্ত করা হয়। আম জলে ফেললে যদি জলে ডুবে ভাসে, তা হলে আম পাড়ার উপযুক্ত হয়। আম পাড়ার পরে ৫২ সেন্টিগ্রেড গরম জলে ৫ মিনিট ডুবিয়ে নিলে ফল সমানভাবে পাকে, স্বাদ ভালো হয়। ফল সহজে পচে না।

 

রোগপোকা (ওষুধের মাত্রা প্রতিলিটার জলে)

১. শোষক পোকা: কচিপাতা ও মুকুল থেকে রস চুষে খায়, ফলে গুটি ঝরে পড়ে। ফোসালোন (১.৫ মিলি.) বা কার্বারিল (২.৫ গ্রাম) বা অ্যাসিটামিপ্রিড (০.২ গ্রাম) বা থায়ামেথক্সাম (০.৩ গ্রাম) বা ফ্লোনিকামিড (০.২ গ্রাম) বা কার্বোসালফান (২ মিলি.) বা প্রোফেনোফস (১.৫ মিলি) স্প্রে। আমের মুকুল আসার পর গাছের গুঁড়ির নীচের দিকের অংশ চকচকে পলিথিন কাগজে মুড়ে দিলে শোষক পোকার কাণ্ড বেয়ে ওপরে ওঠা ব্যাহত হয়।

২. কাণ্ড ও ছাল ছিদ্রকারী পোকা: গাছের ছাল ছিদ্র করে পোকা ভিতরে ঢুকে যায়। কাণ্ডের গায়ে পোকার মল দেখা যায়। কেরোসিন ভেজানো তুলো দিয়ে ছিদ্র বন্ধ করা হয়।

৩. ফলের মাছি: আমের ভিতরে বা ছালের নীচে ডিম পাড়ে। পরে ওই জায়গায় কালো দাগ হয় ও আম পচে যায়। প্রতিকার শোষক পোকার মতো।

৪. সাইলিডগল: পোকার আক্রমণে গাছের ডগায় মুকুলের পরিবর্তে সবুজ গুটি ধরে—আম ধরে না। আক্রান্ত ডগা ভেঙে দিয়ে গাছের গোড়ায় কার্বারিল-৫% গুঁড়ো প্রয়োগ করা হয়। আশ্বিন ও ফাল্গুন মাসে থায়ামেথক্সাম (গ্রাম) স্প্রে করা যেতে পারে।

৫. অ্যানথ্রাকনোজ: পাতা, বোঁটা, মুকুল ও ফলে বাদামি বা কালো পচন দাগ দেখা যায়। ম্যানকোজেব (২.৫ গ্রাম) বা কপার অক্সিক্লোরাইড (৪ গ্রাম) স্প্রে।

৬. সাদা গুঁড়ো রোগ: পাতা, মুকুল ও ফলের ওপরে সাদা পাউডারের মতো গুঁড়ো দেখা যায়। মুকুল শুকোয়, ফল ও ফল ঝরে। সালফার গুঁড়ো (৩ গ্রাম) বা প্রোপিকোনাজোল (০.৭৫ মিলি.) বা ডাইফেনকোনাজোল (১ মিলি) বা হেক্সাকোনাজোল (১.৫ মিলি.) স্প্রে।

৭. ব্ল্যাকটিপ: ফলের শেষ প্রান্তে কালো দাগ ও ফল পচে যায়। কালো দাগ পড়া অংশ থেকে বাদামি আঠা বার হয়। ইট ভাটা বা কয়লা। পোড়ানো ধোঁয়ার জন্য এ রোগ হয়। বোরাক্স (২ গ্রাম) কিংবা অক্টাবোরেট (১ গ্রাম) স্প্রে করা হয়।

 

ফলন:

৫-৬ টন/একর (১০০০-৩০০০টি ফল প্রতি গাছে)।

 

কলা

শ্রেণীবিন্যাস

বৈজ্ঞানিক নাম: মুসা  স.পি.পি      উত্স: দক্ষিণ – পূর্ব এশিয়া

পরিবার:   মুসাসেই           ক্রোমোজোম সংখ্যা: ২ন= ২২,৩৩,৪৪

 

ভূমিকা:

কলা পশ্চিমবঙ্গর একটি প্রধান ফল। বিভিন্ন খাদ্যগুণ ভরপুর, সহজপাচ্য ও তাৎক্ষনিক শক্তিদায়ক এই ফলর চাহিদা ও চাষ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছ। কলা চাষ লাভজনক ।

উৎপত্তি : দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া । প্রাকৃতিক সংকরায়ন প্রদ্ধতিত কলা দুটি বন্য প্রজাতির মিলনর ফল চাষযাগ্য কলার প্রজাতি উৎপন্ন হয়।

জলবায়ু  মাটি : ভারতবর্ষ সহ পৃথিবীর সমস্ত উষ্ণ ও নাতিশীতাষ্ণ অঞ্চল কলার চাষ করা হয়। ২০ থক ৩৫ সন্টিগ্রড তাপমাত্রা এবং ১০০ থক ২০০ সন্টি মিটার বৃষ্টিপাত কলা চাষর পক্ষ উপযুক্ত । তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রির কম বা ৪০ ডিগ্রির বশি হল গাছর বৃদ্ধি ও ফলন ব্যহত হয়। • সচর সুবিধা থাকল সব রকম মাটিতই এর চাষ সম্ভব, যদিও দাঁয়াশ, পলি দাঁয়াশ বা এটল দাঁয়াশ মাটি কলা চাষর পক্ষ আদর্শ।

প্রধান উৎপাদক রাজ্য : মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, গুজরাট, অন্ধ্র প্রদশ, আসাম, বিহার,মধ্য প্রদশ, পশ্চিম বঙ্গ ।

প্রধান উৎপাদক জলা : হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া, পূর্ব মদিনীপুর, জলপাইগুড়ি । তব সব জলাতই কম বশি চাষ হয় । পশ্চিমবঙ্গর বিভিন্ন জলায় ব্যবসায়িক ভিত্তিত কলার চাষ খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করছ । এ রাজ্যর কলা চাষর জমির পরিমান প্রায় ৪২ হাজার হক্টর, গড় উৎপাদন প্রতি হক্টর ২৪ টন এবং মাট বাৎসরিক ফলন ১০১০ হাজার টন । ভারতবর্ষ কলার গড় উৎপাদন প্রতি হক্টর ৩৬ টন, যখান মহারাষ্ট্রের এবং তামিলনাড়ুর গড় উৎপাদন যথাক্রম ৫০ ও ৬০ টন ।

সুতরাং কলা চাষ আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়াগ কর আমাদর রাজ্যও উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব ।

এই উদ্দশ্যক সামন রখ সর্বভারতীয় সমন্বিত ফল গবষনা প্রকল্প এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়র গবষনলন্দ ফলাফল সংক্ষপ উল্লখ করা হল

পশ্চিমবঙ্গ চাষর পক্ষ উপাযুক্ত জাত : ১. বঁট জাতর (ক্যাভনডিস)- গ্রান্ড নাইন, রাবাষ্টা, জায়ন্ট গভর্নর, কাবুলী;  ২. মাঝারি জাতর (সিদ্ধ) – মর্তমান, চাঁপা, মালভাগ, ৩. লম্বা জাত- কাঁঠালি (বাইশা, বাগদা), মনায়া, আঁঠিয়া ৪. কাঁচকলার জাত – বহুলা, বাইশছড়া, গ্রীন বাম্বাই

তউড় নির্বাচন : সরু পাতাযুক্ত, গাড়া থক উপরর দিক ক্রমশঃ সরু আকৃতির ১.৫-২ কজি ওজনর নীরাগ তউড় নির্বাচন করত হব। তউড় গুলি পরিস্কার কর কার্বন্ডাজিম দ্ৰবণ (২ গ্রাম/লিটার জল) শাধণ করত হব ।

টিস্যু কালচার চারার ক্ষত্র ৫-৭ টি পাতাযুক্ত ৩০ ৪০ সমি লম্বা চারা নির্বাচন করত হব ।

লাগানার সময় : খুব ঠান্ডা ও গরমর সময় বাদ সারা বছর কলা লাগানা যায় । ফাল্গুন (ফব্রুয়ারী – মার্চ) ও আশ্বিন (সপ্টম্বর – অক্টাবর) মাস চারা বসাল কম সময় ফলন পাওয়া যায় এবং ফলন ও আয় বশি হয় ।

জমি তৈরী :  চারা লাগানার আগ জমি ভাল ভাব চাষ দিয় রাদ শুকিয় নিত হব।  লাগানার ১০ দিন আগ জাত অনুযায়ী দূরত্ব রাখ এক ঘনফুট গর্ত কর, ১০ কব্জি গাবর সার বা কমপাষ্ট –ও মাটি গর্ত ভর্তি করত হব। উইপাকা দমনর জন্য ২০ গ্রাম ক্লারাপাইরিফস্ (২%) গুড়া মশাত হব

রাপণর দূরত্ব :

বঁট জাত ১.৮ × ১.৮ মি. ২ x ২.৫ মি। মাঝারি জাত – ২ x ২ মি.। লম্বা জাত- ২× ২.৫ মি

প্রথাগত রাপণর দুরত্ত– ২ × ২ মি. গর্ত-এর দুরত। প্রতি গর্ত-এ একটি চারা। হক্টর ২৫০০ চারা। ফলন : ২০-২৪ টন/হ

উচ্চ ঘন্নত রাপণর দূরত্ব  ২ × ৩ মি গর্ত-এর দূরত্ব। প্রতি গর্ত-এ তিনটি চারা। হক্টর ৫০০০ চারা। ফলন : ৩০-৪০ টন/হ

সার প্রয়াগ : ১০ কব্জি গাবর বা কম্পাস্ট ও ২৫০-৩০০ গ্রাম সিংগল সুপার ফসফট চারা লাগানার কমপক্ষ এক সপ্তাহ আগ প্রতি গর্তর মাটিত মিশাত হব। • মাটি পরীক্ষা কর সারর পরিমান নির্ণয় করা উচিত। তব সাধারণভাব গাছ প্রতি ইউরিয়া, সিঙ্গল সুপার ফসফট এবং মিউরিয়ট অফ পটাশর সুপারিশ মাত্রা হল-

বঁট  মাছারি জাতর জাতর ক্ষত্র : ৫৫০ : ৩২০ : ৫০০ গ্রাম লম্বা জাতর ক্ষ ৪৫০ : ৩২০ : ৪১৫ গ্রাম । • ইউরিয়া ও পটাশ সমান তিন ভাগ ভাগ কর লাগানার তিন, ছয় ও নয় মাস পর প্রয়াগ করত হব।

এরসাধ অনুবাদ্য বিশষ কর বারন (০.১%) ৩ বার স্প্র করত হব। এত ফলন বাড়, ফল ফাটা কম হয় ও মর্তমান কলার ক্ষত্র পাকা ফল শক্তভাব (লাম্পিনস) কম হয়।

জলসচ : সার প্রয়াগর পর সচ দিত হব। গ্রীষ্ম ও শীত কাল ১০ দিন অন্তর ভলি কট সচ প্রয়াগ করত হব। বর্ষা কাল জল নিষ্কাশনর ব্যবস্থা করত হব। সচর আধুনিক পদ্ধতি হলা ‘ডিপ ইরিগশান’- এত সচর জলর সাশ্রয় হয় এবং ৩০-৪০% ফলন বশি হয়।

আগাছা নিয়ন্ত্রন : প্রাথমিক অবস্থায় কলা বাগান বরবটি চাষ কর ২ মাস পর জমিত মিশিয় দিল আগাছা নিয়ন্ত্রন হয় এবং কলার ফলন বাড়• এছাড়া প্যারাকায়াট (২৪% এসএল) বা গ্লাইফাসট  (৪১% এস.এল.) প্রতি লিটার জল ৪ মিলি হার স্প্র করল আগাছা নিয়ন্ত্রন করা যায়।

সাথী ফসল : চারা লাগানার পর প্রথম ৪-৫ মাস সাথী ফসল চাষ করা যায় । শীতকাল বাঁধাকপি এবং গ্রীষ্মকাল লাল ডাঁটা ও পুঁই সাথী ফসল হিসাব লাভজনক । • তব সাথী ফসলর জন্য অতিরিক্ত সার প্রয়াগ ও পরিচর্যা করত হব ।

তউড়  রাগাক্রান্ত পাতা কাটা : নিয়মিত তউড এবং পুরানা ও পাতাগুলি কাটত হব এবং সগুলি মাঠর বাইর গর্ত ফল পচাত হব বা পুড়িয় ফলত হব ।

কাঁদির প্যাকট পুষ্টি : মাচা কাটার পর কাঁদির ডাটিত ২৫০-৩৫০ গ্রাম পুষ্টি দ্রবনসহ পলিখিন প্যাকট বন্ধ দিল ফলগুলি – মাটা হয় এবং কাঁদির ওজন বাড় । পুষ্টি প্রবনর উপাদান : ১০ লিটার জল 50 – কজি কাচা গাবর + ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া + ১৫০ গ্রাম সালফট অফ পটাশ ।

কাঁদি ঢাকা দওয়া : মাচা কাটার পর শতকরা ৬ ভাগ ছিদ্রযুক্ত ১০০ গজর স্বচ্ছ বা নীল পলিথিন দিয় কাঁদি ঢক দিল • ফলর রং উজ্জ্বল হয়, পাকার আক্রমন কম হয় এবং ফল কিছুটা মাটা হয় ।

কাঁদি কাটা : মাচা আসার পর জাত অনুযায়ী ১০ ধক ১২০ দিনের মাথায় কাঁদি কাটার উপযুক্ত হয়। • এ সময় ফল বশ সৃষ্টি হয়। কলার মাথায় ফুলর অংশটিও ঝর যায়। খাসার উপরর শিরাগুলি মিলিয় যায়। মর্ত্তমান জাতর ফাঁসি কাটার সময় টি. এস. এস. ১৮ ক ২৪° হয়।

কলার প্রধান কীট শত্রুর পরিচয়  তার নিয়ন্ত্রন

কলার কান্ডছিদ্রকারী পাকা–  ভারত কলা উৎপাদনকারী সমস্ত রাজ্যই কাভছিদ্রকারী পাকা একটি প্রধান সমস্যা।  এই পাকার লার্ভা উপকাত্তর মধ্য ছিদ্র কর ভিতর প্রবণ কর এবং মজ্জার ক্ষতি কর, ফল গাছ মর যায় বা কাঁদি ছাট হয়। আক্রান্ত বাগান এই পাকার বিভিন্ন দশা সারা বছর দখত পাওয়া যায়। কলাগাছর ২৫-৫০ সমি মাটা উপকাণ্ডর ১ মিটার উচ্চতার মধ্য পূর্ণাঙ্গ পাকা ডিম পাড় ।

এই পাকার ডিম গুলি দিয় রং-এর এবং মাকুর মত দখত হয়। ডিম এক লার্ভা বরিয় উপকাভর ভিতরকার মাশ খয় সুড়ঙ্গ তৈরী কর । পিউপা দশা কান্ডর ভিতরই সম্পন্ন হয়।

প্রতিকার ব্যবস্থা : উপকান্ডক ছাট ছাট টুকরা কর বাগান ছড়িয় দিল তাত পূর্নাঙ্গ পাকা আকৃষ্ট হয়, পর পাকাগুলি সংগ্রহ কর মর ফলত হব।  উপকান্ডর গর্ত ডাইক্লারাভস (০.০৫%) ইনজকশান কার্যকারী হয়।

আক্রান্ত বাগান কুইনালফস ২ মিলি অথবা ভারসবান ২ মিলি প্রতি লিটার জল মিশিয়া করত হয়।

কলার ক্ষতচিহ্নকারী পাকা– পূর্ব ভারত কলার একটি প্রধান কীট শত্রু হলা ফলর ক্ষতচিহ্নকারী পাকা । এই পাকার আক্রমণ কলার ফলন প্রায় ৩০% ও বাজার মূল্য ৪০% হ্রাস পায়। পর্যবক্ষণ কর দৰা গছ য এর পূর্ণাঙ্গ পাকাগুলির আবির্ভাব হয় ফব্রুয়ারী মাসর গুরুতই এবং এদর সংখ্যা মাসর শুরু এক ক্রমশ বাড়ত বাড়ত সর্বাধিক হয় সপ্টম্বর মাস । শীতর শুরু এক তাপমাত্রা কমার সাথ সাথ এর সংখ্যা কমত থাক। এই পাকা ফব্রুয়ারী এক অক্টাবর পর্যন্ত কচি, পাকানা পাতা এবং ফলর উপর দাগ সৃষ্টি হয়। এর ফল ফলন কম যায় এবং তার বাজার দর কম হয়।

প্রতিকার ব্যবস্থা শীত ও গ্রীষ্ণ কাল জমি গভীর ভাব চাষ দিত হব এবং কলা বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখত হব। কাঁদি বরানার পর ছিদ্রযুক্ত ২০-৩০ মাইক্রন পুরু পলিথিন (স্বচ্ছ/নীল) দিয় কাঁদি ঢক দিল এই পাকার আক্রমন রাধ করা যাব। অ্যাসিফট (০.১১২৫%) ১ মিলি এবং আঠা (০.৫ মিলি) প্রতি লিটার জল মিশিয় স্প্র করল পাকার উপদ্রব কম হয়।

কলার পাতায় দাগ বা পাতা শুকিয় যাওয়া রাগ ও তার প্রতিকার-

সারা পৃথিবীতই এই রাগ সখা যায় এবং প্রভূত ক্ষতি কর যার পরিমান ৭০% পর্যন্ত হত পার । পাতার কিনারা বা ডগা এক ওকাত শুরু হয় অথবা পত্র ফলক য কান স্থান কালচ বাদামী বা ধূসর রয়ের ক্ষত বা দাগ দখত যায় । -প্রথম নিচর পাতায় শুরু হয় এবং ক্রম উপরর পাতায় রগের বিস্তার ঘটত থাক। সম্পূর্ন পাতাটি অকাল শুকিয় যায় । বশ কিছু কার্যকারী পাতা শুকিয় যাওয়ার ফল গাছর বৃদ্ধি কম যায়, গাছ দুর্বল হয় পড় এবং প্রত্যাশীত ফলন হয় না।

উপাযাগী আবহাওয়া :  উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া, মাঝ মাঝ অল্প বৃদ্ধি, এই রাগর প্রকাশ বৃদ্ধি কর।

মঠা আসার পর গ্রাহর রাস্তা সহনশীলতা কম যায়। মর্তমান ও সিঙ্গাপুরী জাতীয় কলাত এই রাগ বেশী হয়।

রাগর কারণ : একাধিক ছত্রাক জীবানু কলার পাতায় আক্রমন কর বিভিন্ন রকম লক্ষণ সৃষ্টি কর।

এই ছত্রাকগুলি বাতাস এক জায়গা এক অন্য জায়গায় সহজই ছড়িয়ে পড় এবং রাগ সৃষ্টি কর ।

রাগ প্রতিরাধ  নিয়ন্ত্রন : বাগান আগাছা মুক্ত ও নিয়মিত গুরুনা পাতা পরিষ্কার রাখা। জাত অনুয়াযী সঠিক দুরত্ব তউড় রাপন করা। রাগ সহনশীল জাত চাষ করা যমন, কাঠালী, বাগদা, চাপা, ঠাঁট, কাঁচকলা, ফিয়া ইত্যাদি। বাগান সাগর লক্ষণ দথা গল ছত্রাক নাশক ঔষ প্রয়াগ করা। বর্ষার গুরুতই রাগর প্রাদুর্ভাব দ য় । রাগাক্রান্ত গুরুনা পাতা এই বাগানর বাইর পঁচিয় ফলা। কার্যকারী রাসায়নিক ঔষধ যমন, প্রাপিকানাজল, ট্রিডমরক ইত্যাদি গ্রু য়াজন অনুযায়ী লিটার প্রতি ১ মিলি হার প্রয়াগ করা।

কলার উইল্ট বা ঢল পড়া রাগরাগর লক্ষণ : সাধারনত গাছর তৃতীয় বা চতুর্থ পাতা প্রথম হলুদ হত শুরু কর, ধীর ধীর সমস্ত পাতা হলুদ হয় শুকিছু যায় এবং গাছর চারপাশ ঝুল থাক। উপকান্ডটি চির ফলন কালচ বাদামী রংত্তর লম্বা লম্বা দাগ দখা যায় । অনক যায় উপকাণ্ড জনা লম্বি ফট যায় এবং ভিতরর অংশ বরিয় আস।

বিশষ তথ্যাবলী : মৃত্তিকা বাহিত ছত্রাক জীবানু (কিউজারিয়াম অক্সিম্পারাম কিউবনসি) এই রাগর সৃষ্টি কর আক্রান্ত তউড় দ্বারা সাধারনত এই রাগ ছড়ায় এবং ছত্রাক জীবানু দীর্ঘ দিন মাটিভ বঁচ থাকত পার । য কান বয়সর শিকার মাধ্যম আক্রমন ঘটত পার ।

রাগ নিয়ন্ত্রনর উপায় সমূহ  নিরাগ বাগান এক সুস্থ তউড় জাগাড় করা। কন্দর গল্প সমস্ত শিকড় ও মাটি পরিস্কার কর নওয়া। কার্বভাজিম দূরন (লিটার প্রতি ২ গ্রাম) তউড় শাধন করা, বাগান সূ নিয়নगন করা যখন “ছাট পট পরিমিত সচদওয়া এবং ড্রিপ স গাছ খামাত্র কন্দমূহ উপড় নষ্ট কর দত্তয়া, ইসা বা কাটার যন্ত্র আজও গাছ কাটার পর ফরমালিন বা কার্বভাজিম এখন ডুবির সওয়া, আক্রান্ত বাগান দুই-তিন বছর চার না করা, রাগ প্রতিদ্বায়ী জাতর চাষ করা (যমন- ক্যানডিস, দশী কাঁঠালী ইত্যাদি)

 

 

কুল চাষ

শ্রেণীবিন্যাস

বৈজ্ঞানিক নাম: জিজইফুস মাউরিটিয়ানা     উত্স: দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া/ইন্দো-চীন/ভারত

 

পরিবার:  রহমনাসে             ক্রোমোজোম সংখ্যা: ২ন= ৪৮

 

ভূমিকা:

সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বাউকুল। এই বাউকুল চাষ করে যে কেউই সহজে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন। নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে এই মৌসুমী ফলের চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন সফল বাউকুল চাষী নরসিংদীর এম এ কাউসার মিলন।

পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া কুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। জলা বদ্ধতাহীন যে কোন মাটিতে বাউকুল চাষ করা যায়। এই গাছের জীবনীশক্তি অনেক। অল্প পুঁজি, অল্প জমি এবং অল্প সময়ে বাউকুল চাষ করে সফলতা আনা সম্ভব। চারা লাগানোর প্রথম বছর ছাড়াও প্রতি বছর গাছ ছাঁটার পর জমি ফাঁকা হয়ে যায়। তখন মৌসুমী সবজি চাষ করে কুল বাগানের বাৎসরিক পরিচর্যা খরচ উঠিয়ে নেয়া সম্ভব। এই সময়টুকুতে বেগুন, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়শ, অথবা হাইব্রিড ধনেপাতার চাষ করা যায় ।

ছয় বছরে আয়-ব্যয়ের হিসাবটুকু একটু মিলিয়ে নেয়া যাক। সে আলোকে নিম্নে সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের ছক দেখানো হলো। এক বিঘা জমিতে কুল চাষ করতে প্রথম বছর চারার দরকার হয় ১৫০টি। সেক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ফুট এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ছয় ফুট। তিন বছর পর দুটি গাছের মাঝ থেকে একটি গাছ উঠিয়ে ফেলতে হবে এবং গাছের সংখ্যা দাঁড়াবে ৭৫টি।

কোথায়, কখন কীভাবে ?

আগেই বলা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র জলাবদ্ধতাহীন জমিতে বাউকুল চাষ করা যাবে। পাহাড়ের ঢালে, পুকুর পাড়ে, কিংবা বালুময় চরাঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনায় রৌদ্রজ্জ্বল স্থানে এমনকি আপনার বাড়ির ছাদে টব কিংবা ড্রামে। মধ্য মে থেকে মধ্য আগষ্ট পর্যনত্দ কুলের চারা রোপনের উৎকৃষ্ট সময়। এছাড়াও পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থা থাকলে সারা বছরই কুলের চারা রোপন করা যায়।

রোপন পদ্ধতি

সাধারণ

সামপ্রতিক মাঠ গবেষণায় দেখা গেছে পাহাড়ের লাল মাটি, পুকুর পাড়, বাড়ির আঙ্গিনা এবং অসমতল অনাবাদী জমি ব্যতীত অন্যান্য ফসলি জমি যেমন, এঁটেল, দো-আঁশ, পলি মাটিতে গর্ত করে মাদা তৈরি করার প্রয়োজন হয় না। এ ধরণের জমি তৈরিতে শেষ চাষের সময় বিঘা প্রতি ৬০ কেজি টিএসপি, ৩০ কেজি ইউরিয়া, ৩০ কেজি এমওপি, ৬০ মণ পঁচা গোবর ও দুই কেজি পাউডার সোহাগা প্রয়োগ করে মই দিয়ে জমি সমান করতে হবে এবং প্রতি ১২ ফুট অনত্দর ১৫ ইঞ্চি প্রস্থ ৬ ইঞ্চি গভীর নালা তৈরি করে নালার মাটি উভয় পাশে ছিটিয়ে দিয়ে সমসত্দ জমিতে ১২ ফুট প্রস্থের বেড তৈরি করতে হবে। এর এক সপ্তাহ পর প্রতি বেডের মাঝখানে ৬ ফুট অনত্দর চারা রোপন করতে হবে।

মাদা তৈরি

সারি থেকে সারি ১২ ফুট এবং চারা থেকে চারা ছয় ফুট দূরত্বে চারা রোপনের লক্ষ্যে আপনাকে উল্লেখিত দূরত্বে দুই ফুট দূরত্বে দুই ফুট দৈর্ঘ্য, দুই ফুট প্রস্থ এবং দুই ফুট গভীর গর্ত করতে হবে। গর্ত থেকে উত্তোলিত মাটির সাথে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০গ্রাম এমওপি, ১০০ গ্রাম সরিষার খৈল ও ১০ গ্রাম পাউডার সোহাগা এবং ১৫-২০ কেজি পঁচা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে গর্তের পাশে ঢিবি করে রেখে দিতে হবে এক সপ্তাহ। তারপর সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে গর্তটি ভরাট করার দুই সপ্তাহ পর কুলের চারাটি রোপন করে একটি কাঠি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। কলমকৃত অংশের নীচ থেকে গজানো ডাল বা কুশি সবসময় কেটে দিতে হবে। নতুবা জংলি গাছের প্রভাবে কলম চারাটি মারা যেতে পারে।

ড্রামে বা টবে চাষ

এক্ষেত্রে সমপরিমাণ মাটি ও পঁচা গোবর ভালভাবে মিশিয়ে ড্রাম বা টবটি ভরাট করে দুই সপ্তাহ রেখে দিয়ে চারা রোপন করতে হবে এবং ১৫ দিন চারটি সিলভামিক্স ট্যাবলেট গাছের তিন ইঞ্চি গভীরে পুঁতে দিতে হবে। এইভাবে ফুল আসার সময় আর একবার সিলভামিক্স ট্যাবলেট প্রয়োগ করতে হবে।

টব/ অর্ধড্রামে কুলের চাষ

  • ক. প্রথমেটবেরতলায় ১ ইঞ্চি পরিমাণ ইটের খোয়া, পচাঁ পাতা এবং খড় বিছিয়ে দিতে হবে।
  • খ. পুরোটববা ড্রামটি সমপরিমান পচাঁ গোবর ও দো-আঁশ মাটির মিশ্রন দিয়ে ভরে দিতে হবে।

গ. এবার টবের মাঝ খানে একটি সুস্থ্য ও সবল কলম রোপন করতে হবে। এ জন্য কোন প্রকার রাসায়নিক সারের দরকার নাই।

  • ঘ. তবেগাছেরকচি পাতা বের হয়ে তা পরিপক্ক হলে ২-৩ টি সিলভা মিক্স ট্যাবলেট সার গাছের গোড়া হতে ৫-৭ সে.মি. দুরে ৫-৭ সে.মি. মাটির গভীরে পুতে দিতে হবে।
  • ঙ. গাছেরপ্রয়োজনঅনুসারে সেচ ও নিকাশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ভালভাবে যত্ন করলে এক বছরের বয়সী গাছ থেকে হেক্টর প্রতি ৮-১২ টন ফলন পাওয়া যায়।

উপরি প্রয়োগ

বাগান সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা লাগানোর পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে এবং গাছে ফুল আসার আগে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়াও গাছের বৃদ্ধি কম হলে প্রথম প্রয়োগের ৪০ দিন পর গাছ প্রতি ১০০ গ্রাম ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হবে।

প্রথম উপরি প্রয়োগ

গাছ প্রতি ইউরিয়া ৫০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম এবং খৈল ৫০ গ্রাম একসাথে মিশিয়ে গাছের ছয় ইঞ্চি দূরত্বে রিং প্রয়োগ করে হালকা নিড়ানি দিয়ে মাঠের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছ প্রতি ইউরিয়া ১০০ গ্রাম, এমওপি ৫০ গ্রাম, টিএসপি ২০০ গ্রাম এক সাথে মিশিয়ে গাছের ৬ ইঞ্চি দূরত্বে প্রয়োগে হালকা নিরানি দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

প্রতি বছর কুল ওঠানোর পর মার্চ মাসের শেষের দিকে গাছগুলোর আকার অনুসারে ৩-৫ ফুট উচ্চতায় মূল কাণ্ডটি রেখে সব ডালপালা ছেঁটে দিতে হবে এবং বাগানের মাটি হালকা করে কুপিয়ে প্রথমবার জমি তৈরির মত গোবর ও অন্যান্য সার পরিমাণ মত প্রয়োগ করে নালাসহ বেড তৈরি করে দিতে হবে।

রোগবালাই

যথেষ্ট প্রতিকূলতা সহনশীল কুল গাছ সাধারণত বিছাপোকা, লাল ক্ষুদ্র মাকড়সা, কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকা ও এক ধরণের ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয়।

প্রতিকার

বিছাপোকা ও অন্যান্য পাতাখেকো পোকার জন্য প্রতি লিটার জলতে দুই মি.লি. পাইরিফ্স জাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে সমস- গাছে স্প্রে করে দিতে হবে। মাকড়শা দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার জলতে দুই টাফগড় সাথে দুই গ্রাম থেয়োভিট মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে। কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে প্রতি লিটারে এক মি.লি. হারে সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক সপ্রে করতে হবে। ছত্রাকের আক্রমণ হলে প্রতি লিটার জলতে কার্বেনডাজম এবং দুই গ্রাম মেনকোজেব ভালভাবে মিশিয়ে সমস- গাছে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া অধিক ফলনের জন্য ফুলে লিটুনেস বা এ্যাগনল এবং ভালমানের পিজিআর ব্যবহার করুন।

কুলবাগানের পরিচর্যা

কয়েক বছর আগেও পশ্চিমবঙ্গে কুলের চাষ বসতবাড়ি, রাস্তার পাশে কিংবা পুকুরপাড়ে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু বর্তমানে কুল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। কারণ কুল চাষে কম সময়ে ভালো লাভ করা যায়। তবে ভালো লাভ পাওয়ার জন্য বিশেষ কিছু কাজ করতে হয়। কাজগুলো হলো¬

কুলবাগান সব সময় পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখতে হবে। বর্ষার পর বাগানে বিভিন্ন ধরনের আগাছা জন্মায়। এরা গাছের খাদ্যে ভাগ বসায় এবং বিভিন্ন পোকামাকড় ও রোগজীবাণুর আশ্রয়স্খল হিসেবে কাজ করে। এ জন্য কোদাল দিয়ে কুপিয়ে বাগানের সব আগাছা দমন করতে হবে।

কুলবাগানে ফুল ফোটা অবস্খায় কোনো কীটনাশক স্প্রে করা উচিত নয়। কিন্তু মানসম্পন্ন কুল পাওয়ার জন্য কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে। কুলের গুটি বাঁধার পর স্প্রে করলে ফলনের ওপর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে না। তবে কুল সংগ্রহের সাত থেকে ১০ দিন আগে কীটনাশক স্প্রে করা যাবে না।

কুলের পাউডারি মিলডিউ একটি মারাত্মক রোগ। গাছের পাতা, ফুল ও কচি ফল পাউডারি মিলডিউ রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত ফুল ও ফল ঝরে পড়ে। গাছের পরিত্যক্ত অংশ এবং অন্যান্য পোষক উদ্ভিদে এই রোগের জীবাণু বেঁচে থাকে এবং বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। কুলগাছে ফুল আসা শুরু হলে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার জলতে দুই গ্রাম হারে মিশিয়ে সাত থেকে ১০ দিন পরপর দুইবার স্প্রে করতে হবে।

কুলবাগানে বর্তমানে অ্যানথ্রাকনোজ রোগ দেখা যাচ্ছে। রোগটি কুলের গুটি বাঁধার পর বেশি ক্ষতি করে। এই রোগ হলে কুলের গায়ে কালো দাগ দেখা যায়। রোগ দেখা মাত্রই কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক সাত থেকে ১০ দিন পরপর দুই বার স্প্রে করতে হবে।

কুলের ফুল আসা শুরু হলেই ব্যাগওয়ার্ম বা বাসকেটওয়ার্ম পোকার আক্রমণ দেখা যায়। এরা কুলের রস শোষণ করে কুল নষ্ট করে ফেলে। এদের দেখা মাত্রই স্পর্শক প্রবাহমান কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় সাত থেকে ১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

কুল মটরদানা থেকে শুরু করে পরিপক্বব হওয়া পর্যন্ত স্টোন উইভিল পোকায় আক্রান্ত হয়। কুল মটরদানা মতো হলেই যেকোনো কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় সাত থেকে ১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

কুল পরিপক্ব হওয়ার কিছু দিন আগে মাছিপোকা দেখা যায়। এই পোকা দমনের জন্য যেকোনো কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে। তবে কুল সংগ্রহের সাত থেকে ১০ দিন আগে স্প্রে বìধ করতে হবে।

 

 

ড্রাগন ফল (পিটায়া নতুবা স্ট্রবেরি নাশপাতি)

শ্রেণীবিন্যাস

বৈজ্ঞানিক নাম: হ্যালোসেরেউস উন্দাটুস     উত্স: দক্ষিণ মেক্সিকো/মধ্য আমেরিকা

পরিবার: ক্যাক্টাসেই   ক্রোমোজোম সংখ্যা: ২ন= ২২ (লাল, গোলাপী), ২ন=৪৪ (হলুদ)

ভূমিকা:

এই ফলটি থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইসরায়েল এবং শ্রীলঙ্কায় বিখ্যাত। ভারতে এই ফলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ বাড়ছে এবং ভারতে এই ফলের বাজার মূল্য রয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা/কেজি।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ-ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ অ্যাবায়োটিক স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট, মহারাষ্ট্রের বারামতির সাম্প্রতিক অনুমানে দেখা গেছে যে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ৩০০০-৪০০০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করা হয়। দেশটি প্রতি বছর প্রায় ১২০০০ টন ফল উৎপাদন করে।

স্বাস্থ্য সুবিধাসমুহ

এই ফলটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কোলেস্টেরল কমানো। চর্বি এবং প্রোটিন, উচ্চ. অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস। আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি, ওজন ব্যবস্থাপনা, বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই, হাঁপানি প্রতিরোধ এবং ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ

 

ড্রাগন ফলের প্রধান প্রকার:

তাদের রঙের উপর ভিত্তি করে ৩ প্রকারের ড্রাগন ফল রয়েছে।

লাল চামড়া সাদা মাংসের ড্রাগন ফলের জাত (হ্যালোসেরেউস উন্দাটুস)- গোলাপী রঙের উপরের এপিকার্প, ভোজ্য অংশ কালো বীজ সহ সাদা রঙের,

গোলাপী চামড়ার সাথে গোলাপী মাংসের ড্রাগন ফলের জাত (হ্যালোসেরেউস কোস্টারিসেনসিস)- উপরের এপিকার্প, সেইসাথে ভোজ্য অংশ, কালো বীজ সহ একটি গোলাপী রঙ।

সাদা মাংসের হলুদ চামড়া ড্রাগন ফ্রুট ভ্যারাইটি (হাইলোসেরিয়াস মেগালান্থাস)- উপরের এপিকার্প হলুদ বর্ণের, ভোজ্য অংশ কালো বীজ সহ সাদা রঙের।

 

জলবায়ু  মাটি এই ফলের গাছ মাটির খারাপ অবস্থা এবং তাপমাত্রার তারতম্যে বেঁচে থাকে। তবে গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু অঞ্চল এর চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এই উদ্ভিদের জন্য ন্যূনতম বার্ষিক বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন ৫০ সেমি এবং তাপমাত্রা প্রায় ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস। খুব বেশি সূর্যালোক এর চাষের জন্য ভাল নয়, উচ্চ সূর্যালোক এলাকায়, ভাল ফলনের জন্য ছায়া প্রদান করা যেতে পারে।

বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল দো-আঁশ পর্যন্ত বিস্তৃত মাটিতে এই ফল জন্মানো যায়। তবে, ভাল জৈব পদার্থ এবং অভ্যন্তরীণ নিষ্কাশন সহ বালুকাময় মাটি এর চাষের জন্য সর্বোত্তম। ড্রাগন ফল চাষের জন্য মাটির পিএইচ ৫.৫ থেকে ৭সবচেয়ে ভালো।

 

বংশবিস্তার  রোপণ পদ্ধতি ড্রাগন ফলের সবচেয়ে সাধারণ বংশবিস্তার পদ্ধতি কাটিং ও বীজ দ্বারা। কিন্তু বীজ যেহেতু বেশি সময় নেয় তাই এই পদ্ধতি বাণিজ্যিক চাষের জন্য উপযুক্ত নয়। জমিতে রোপণের জন্য প্রায় ২০ সেমি দৈর্ঘ্যের কাটিং ব্যবহার করতে হবে। পটিংয়ের দুই দিন আগে এই কাটিংগুলিকে গাদা করুন।

তারপর এই কাটিংগুলিকে শুকনো গোবর: উপরের মাটি: ১: ১: ২ হিসাবে বালির মিশ্রণ দিয়ে পাত্রে দিতে হবে। রোপণের আগে এই পাত্রগুলি ছায়ায় স্থাপন করা নিশ্চিত করুন। প্ল্যান্ট-টু-প্ল্যান্টের জায়গা ২মি. x ২মি. রাখুন। ৬০ সেমি x ৬০ সেমি x ৬০ সেমি পিটের আকার এবং উপরের মাটি এবং ১০০  গ্রাম সুপার ফসফেট কম্পোস্ট দিয়ে ভরা।

 

প্রশিক্ষণ গাছপালা কংক্রিট বা কাঠের কলাম দ্বারা সমর্থিত হওয়া উচিত। অপরিণত উদ্ভিদের ডালপালা এই কলামগুলির সাথে বাঁধতে হবে। পাশ্বর্ীয় অঙ্কুর সীমিত হওয়া উচিত এবং ২ থেকে ৩টি প্রধান কান্ড বাড়তে দেওয়া উচিত। (পাশ্বর্ীয় কুঁড়ি সময়ে সময়ে নিশ্চিত করুন)। সুষম ড্রাগন ঝোপ বজায় রাখার জন্য বৃত্তাকার/বৃত্তাকার ধাতব ফ্রেম থাকা বাঞ্ছনীয়।

 

সার প্রয়োগ প্রতিটি গাছে ১০-১৫ কেজি সার প্রয়োগ করতে হবে। তারপরে, জৈব সারের পরিমাণ প্রতি বছর ২ কেজি বাড়ান। এই ফসলের উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য অজৈব সারও প্রয়োজন। উদ্ভিজ্জ পর্যায়ে, এই সারের অনুপাত নিম্নরূপ। পটাশের মিউরেট: সুপার ফসফেট: ইউরিয়া = ৪০:৯০:৭০ গ্রাম / উদ্ভিদ।

বেশি ফলন পাওয়ার জন্য ফল ধরার পর্যায়ে কম পরিমাণ নাইট্রোজেন এবং বেশি পরিমাণে পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।

 

ফুল ফোটার ঠিক আগে (এপ্রিল মাসে), ফল বিকাশের পর্যায় (জুলাই-আগস্ট) এবং ফল সংগ্রহের পর (ডিসেম্বরে) নিম্নলিখিত সার মিশ্রণ প্রয়োগ করুন। ইউরিয়া: সুপার ফসফেট: মিউরিয়েট অফ পটাশ = ৫০ গ্রাম : ৫০ গ্রাম : ১০০ গ্রাম / উদ্ভিদ। প্রতি বছর ২২০ গ্রাম করে ১.৫ কেজি পর্যন্ত সারের পরিমাণ বাড়ান।

সেচ এই গাছগুলিতে অন্যান্য গাছের তুলনায় কম জল লাগে। তবে রোপণের সময়, ফুল ফোটার সময়, ফল বিকাশের পর্যায় এবং গরম শুষ্ক আবহাওয়ায় ঘন ঘন সেচের প্রয়োজন হয়। কার্যকর পানি ব্যবহারের জন্য ড্রিপ সেচ ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

কীটপতঙ্গ এবং রোগ ড্রাগন ফলের চাষে কোন কীট বা রোগ পাওয়া যায় না বা রিপোর্ট করা হয় না।

 

ফসল কাটা এই গাছগুলো প্রথম বছরেই ফল ধরতে শুরু করে। সাধারণত, এই গাছগুলি মে থেকে জুন মাসে ফুল ফোটা শুরু করে এবং আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাসে ফল ধরে।

ড্রাগন ফল ফুল আসার 1 মাস পরে ফসল কাটার জন্য প্রস্তুত হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত ফল ধরে। এই সময়ের মধ্যে এই ফলগুলি ৬ বার পর্যন্ত তোলা যেতে পারে। ফল সংগ্রহের পর্যায় শনাক্ত করা খুবই সহজ কারণ অপরিপক্ক ফলের রঙ উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের হয় এবং পাকলে তা লাল রঙে পরিণত হয়। রং পরিবর্তনের ৩ থেকে ৪ দিন পর ফসল কাটার সঠিক সময়। কিন্তু রপ্তানির ক্ষেত্রে রং পরিবর্তনের 1 দিন পর সেগুলো সংগ্রহ করতে হবে। ফল বাছাই করতে কাস্তে বা হাত ব্যবহার করুন।

 

ড্রাগন ফলের ফলন: প্রতি একরে গড়ে ৫ থেকে ৬ টন ফলন আশা করা যায়।

 

 

 

 

 

লিচু

শ্রেণীবিন্যাস

বৈজ্ঞানিক নাম: লিচি চিনেনসিস     উত্স: দক্ষিণ চীন

পরিবার: স্পিন্ডেসেই             ক্রোমোজোম সংখ্যা: ২ন=  ৩০

ভূমিকা:

স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় লিচু একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল | তথাকথিত এই পুষ্টিকর ফলটিকে বলা হয় “বিশ্বের সবচেয়ে রোমান্টিক ফল” | কথিত আছে, ১০৫৬ সালে বিশ্বের প্রথম ফল চাষের বই লেখা হয়, যার মূল ভিত্তিই ছিল লিচু | সঠিক পরিচর্যায় স্বল্প খরচ ও অল্প পরিশ্রমে লিচু চাষে লাভবান হতে পারে কৃষকবন্ধুরা

লিচু চাষের উপযোগী মাটি :

প্রধানত, জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ নিকাশযুক্ত উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি লিচু চাষের জন্য সর্বোত্তম | বিজ্ঞানীদের মতে, মাটির পিএইচমান ৬.৫-৬.৮ হলেই সেই মাটিতে লিচু চাষ সম্ভব | তবে, সমতল বা উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতেও লিচু চাষ করা যায় |

জলবায়ু, বৃষ্টিপাত  আর্দ্রতা:

উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে লিচু গাছের ফলন ভালোভাবে হয় | বাৎসরিক বৃষ্টিপাত ১৫০ সেমি. ও বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৭০-৮৫% লিচু চাষের উপযোগী | মাটি ও জলবায়ুর ধরণ অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালে ৭-১০ দিন অন্তর সেচ দিতে হয় এবং শীতকালে ১০-১২ দিন অন্তর সেচ দিতে হয় | যদি সারাবছর ১২৫ সেমি.র বেশি বৃষ্টিপাত হলে সেচের প্রয়োজন পড়েনা |

জাত পরিচিতি: অনেক জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, গুটি, মাদ্রাজি, বোম্বাই, মঙ্গলবাড়ী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, কদমী সবচেয়ে ভাল। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ৩টি লিচুর জাত উদ্ভাবিত করেছে বারি লিচু-১, বারি লিচু-২ ও বারি লিচু-৩।

বারি লিচু-১: ফল ডিম্বাকার এবং রঙ লাল। দেশের উত্তারাঞ্চলে এ জাতটি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এ জাতটি আগাম জাত।

বারি লিচু-২: বীজ অপেক্ষাকৃত বড়। প্রতি বছর নিয়মিত ফল দেয়। জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষ করা যায়।

 

বারি লিচু-৩: মাঝ মৌসুমী জাত, নিয়মিত ফল ধরে। গোলাপের সুঘ্রান বিশিষ্ট অপেক্ষাকৃত বড় আকারের ফল উৎপাদনকারী এ জাতটি বসতবাড়ীর বাগানের জন্য অত্যন- উপযোগী। ফলের শাঁস মাংসল রসালো ও মিষ্টি।

চাষের জমি তৈরী:

চাষের জন্য নির্বাচিত জমিকে আগাছা মুক্ত করে লাঙল ও ট্রাক্টারের দ্বারা জমি সমতল করে নিতে হবে|

সমতল ভূমিতে বর্গাকার প্রণালীতে এবং পাহাড়ি ভূমিতে কন্টুর প্রণালীতে ১০ মিটার দূরে দূরে ১ মিটার ১ মিটার ১ মিটার আকারের গর্ত খনন করতে হবে | রোপনের জন্য ১ বছরের “গুটি কলমকে” চারা হিসাবে ব্যবহার করতে হবে | মে-জুন মাস জমি তৈরির জন্য উপযুক্ত | গর্তের ওপরের মাটির সাথে ২০-২৫ কেজি জৈবসার , ৫ কেজি কাঠের ছাই, ২০০-৩০০ গ্রাম জিপসাম, ৪০-৬০ গ্রাম জিংক সালফেট মিশিয়ে গর্ত ভরে দিতে হবে | এরপর, জল দিয়ে কিছুদিন রেখে দিতে হবে | আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে মাটির সাথে ২৫০ গ্রাম ইউরিয়া ও এমওপি মিশিয়ে গুটিকলমগুলি বসাতে হবে |

চাষের পরিচর্যা:

ডাল ছাঁটাই:

গাছের প্রধান কান্ড যাতে ৩-৫ ফুট বাড়তে পারে সেইজন্য মাঝে মাঝে মরা ডাল কেটে ফেলতে হবে | অপ্রয়োজনীয় আগাছা পরিষ্কার করে ফেলতে হয় |

আগাছা দমন:

গাছের বৃদ্ধির জন্য জমিকে সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে | বর্ষার শুরু ও শেষে কোদাল কুপিয়ে আগাছা সাফ করে ফেলতে হবে |

মুকুল ভাঙ্গন:

প্রথম ৩ বছর পর্যন্ত মুকুল আসলে তা ভেঙে দিতে হবে, গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির দরুণ | গাছের শাখা-প্রশাখা বৃদ্ধির জন্য ২ ফুট পর্যন্ত ডগাও ভেঙে দিতে হবে |

ফল সংগ্রহ :

ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে লিচু গাছে ফুল আসে | ফল সংগ্রহ শুরু হয়  মে-জুন মাসে | এই সময় ফলের খোসা লালচে রঙের হয় ও কাঁটাগুলো চ্যাপ্টা হয়ে খোসা মসৃণ হয়ে যায় | এতে ফল বেশিদিন ধরে রাখা যায় কিন্তু বৃষ্টি হলে তার পরেই লিচু সংগ্রহ করা উচিত নয় | প্রতি গাছ থেকে বছরে প্রায় ৮০-১৫০ কেজি বা ৩২০০-৬০০০ লিচু পাওয়া যায় |

 

লিচু গাছের কীট বা মাকড়:

লিচু গাছে মাকড়সা জাতীয় এক পোকা পাতায় আক্রমণ করে এবং পাতায় লালচে বাদামি দাগ সৃষ্টি করে | ফলত, গাছ বাড়ে না ও ফলনও কমতে থাকে | প্রতিকারস্বরূপ, আক্রান্ত ডগা ছাঁটাই করতে হবে | প্রতি ১০ লিটার জলে ২০ গ্রাম থিয়োভিট মিশিয়ে সেপ্র করতে হবে | এছাড়া, কাণ্ডের চারপাশে আলকাতরা লাগাতে হবে |

পোকার নাম: লিচুর ফল ছিদ্রকারী পোকা

ভূমিকা: এটি লিচুর একটি ক্ষতিকারক পোকা। এর আক্রমণে লিচুর বাজার মূল্য কমে যায়।

ক্ষতির নমুনা: ফল পরিপক্ক হওয়ার সময় এ পোকা ফলের বোঁটার নিকট দিয়ে ভিতরে ঢুকে বীজ খেতে থাকে। এরা ফলের শাঁস খায় না তবে বোঁটার কাছে বাদামী রংয়ের এক প্রকার করাতের গুড়ার মত পদার্থ উৎপন্ন করে।

 ব্যবস্থাপনা: এ পোকা দমনের জন্য ফল ধরার পর লিবাসিড ৫০ তরল বা ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ তরল অথবা টোসিটকস আর ২৫ তরল এর যেকোন একটি প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার সেপ্র করতে হবে। তবে মনে রাখতে হবে ফল সংগ্রহের অন্তত: ১৫ দিন পূর্বে শেষ সেপ্র করতে হবে।

মাকরের নাম: লিচুর পাতার ক্ষুদ্র মাকড়

 ভূমিকা: লিচু গাছের পাতা, ফুল ও ফলে এর আক্রমণ দেখা যায়।

ক্ষতির নমুনা: আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং পাতার নীচের দিক লাল মখমলের মত হয়। পরবর্তীতে পাতা দুর্বল হয়ে মরে যায় এবং ডালে ফুল, ফল বা নতুন পাতা হয় না। আক্রান্ত ফুলে ফল হয় না।

ব্যবস্থাপনা: আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা। ইথিয়ন ৪৬.৫ তরল বা নিউরণ ৫০০ তরল ২ মি.লি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে ভালভাবে সেপ্র করা।

 

লেবু

শ্রেণীবিন্যাস

বৈজ্ঞানিক নাম- সাইট্রাস  .পি.পি        উৎপত্তিস্থল- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া/চীন/ভারত

পরিবার- রুটসেই  ক্রোমোজোম নং- ২ন= ১৮

ভূমিকা:

ভারতে, কলা এবং আমের পরে সাইট্রাস ফল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে। সাইট্রাস ফসলের মধ্যে, ম্যান্ডারিন কমলা (কিন্নু ম্যান্ডারিন, নাগপুর, খাসি। ডার্লিং) সবচেয়ে বড় এলাকা জুড়ে তার পরে মিষ্টি কমলা (মুসাম্বি, আনারস, ব্লাড রেড এবং জাফা) এবং অ্যাসিড লাইম। এর মধ্যে কিন্নু ম্যান্ডারিন উৎপাদন, উৎপাদনশীলতা, রসের পরিমাণ এবং ফলের গুণমানে সর্বোচ্চ স্থান বহন করে।

ভারতে সাইট্রাস প্রায় ৯২৩.২ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় যার আনুমানিক উত্পাদন ৮৬০৭.৭ হাজার মেট্রিক টন। পাঞ্জাবে সাইট্রাস ৩৯.১৯৮ হেক্টর দখল করে যার বার্ষিক উৎপাদন ৭৩৪৬৯৯ মেট্রিক টন। কিন্নু লেবুর আওতাধীন এলাকার ৫৪.৯% দখল করে

জলবায়ু জলবায়ু ও মাটি : আর্দ্র ও উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে জারা লেবু ভালো জন্মে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এমন পাহাড়ি অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনযুক্ত অম্লীয় মাটি এটি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। উৎপাদনের জন্য বছরে ১৫০০-২০০০ মিলি লিটার বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। ২৫-৩০ সেলসিয়াস গড় তাপমাত্রা প্রয়োজন। মাটির অম্লত্ব ক্ষারত্ব মান ৫-৬ হলে ভালো হয়। লেবু চাষের জন্য হালকা দোঁ-আশ ও নিষ্কাশন ক্ষমতা সম্পন্ন অম্লীয় মাটি প্রয়োজন।

জাত পরিচিতি

বারি লেবু-১ (এলাচী লেবু)

উচ্চ ফলনশীল লেবু বারি লেবু-১।ঘ্রাণ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।গাছ আকারে বড়।পাতা বড় ও প্রশস্ত। পরিচর্যা পেলে গাছ বছরে দু’বার ফল দেয়।জুলাই-আগস্ট মাসে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।পূর্ণবয়স্ক গাছ ১৫০ টি পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে।আকারে বড়,ডিম্বাকৃতি এবং প্রতিটি ফলের গড় ওজন ১৯৫ থেকে ২৬০ গ্রাম।বৃহত্তর সিলেট এবং আরও অনেক এলাকায় এলাচী লেবুর খোসা খাওয়া হয়।

বারি লেবু-২

বারি লেবু-২ উচ্চ ফলনশীল জাত।মধ্যম আকৃতির ও ঝোপের মতো গাছ।সারা বছর প্রচুর ফল দেয়।ফল গোলাকার,মধ্যম ওজনের।ত্বক মসৃণ এবং বীজের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। এই লেবু সারা দেশেই চাষাবাদের উপযোগী।

বারি লেবু-৩

একটি দেরীতে হওয়া (নাবি)জাত বারি লেবু-৩।গাছ ও পাতা ছোট আকৃতির।ফল গোলাকার ও ছোট। ত্বক খুবই মসৃণ,খোসা পাতলা এবং বীজের সংখ্যাও কম ১৮-২২টি।রসের পরিমাণ খুব বেশি (৩৭.৭%)।সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফল খাওয়ার উপযুক্ত হয়।সার ও জলর ব্যবস্থা করলে বছরে দু’বার ফল পাওয়া যায়।সারা দেশেই চাষাবাদের জন্য উপযোগী।

বংশবিস্তার : বীজ (চারা) ও অঙ্গজ (কলম) দুইভাবে বংশবিস্তার করা যায়। খুব ভালো মাতৃগুণ সম্পন্ন চারা পেতে কলমের চারা উত্তম। সাধারণত গুটি কলম দিয়ে বংশবিস্তার করা হয়। অঙ্গজ উপায়ে উৎপাদিত গাছে মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে। অঙ্গজ উপায়ে উৎপন্ন চারায় ২ থেকে ৩ বছরেই ফল ধরতে শুরু করে। তাই চারার চেয়ে গুণগত কলম লাগানো উত্তম।

মাদা তৈরি : চারা বা কলম রোপণ করার ১৫-২০ দিন আগে ২.৫ মিটার থেকে ৩.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য, ৬০ সেন্টিমিটার প্রস্থ এবং ৬০ সেন্টিমিটার গভীরতা বিশিষ্ট গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের ওপরের মাটির সাথে ২০ কেজি জৈব সার, ২০০ গ্রাম টিএসপি, ২০০ গ্রাম এমওপি সার ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে দিতে হবে। প্রতি হেক্টর জমিতে ১১১১-১৬০০টি চারা রোপণ করা যায়।

রোপণ পদ্ধতি : লেবুর চারা বা কলম সারি বা বর্গাকার পদ্ধতিতে লাগানো উচিত। ফলে বাগানের আন্তঃপরিচর্যা ও ফল সংগ্রহ করা সহজ হয়। তাছাড়া পাহাড়ি ঢালু জমিতে আড়াআড়ি লাইনে বা সারি করে কলম বা চারা রোপণ করা ভালো। এর ফলে পাহাড়ের মাটি ক্ষয় কম হয়।

রোপণ সময় : বর্ষাকাল চারা বা কলম লাগানোর উৎকৃষ্ট সময়। এক্ষেত্রে মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চারা লাগানো যেতে পারে। তবে যদি সেচ সুবিধা থাকে তাহলে সারা বছরই চারা লাগানো যায়।

 চারা/কলম রোপণ  পরিচর্যা : মাদা তৈরি করার ১৫-২০ দিন পর চারা বা কলম লাগাতে হয়। চারা বা কলম গর্তের ঠিক মাঝখানে খাঁড়াভাবে লাগাতে হবে এবং চারা বা কলমের চারদিকের মাটি হাত দিয়ে চেপে ভালোভাবে বসিয়ে দিতে হবে। চারার গোড়ায় ঝাঁঝরি দিয়ে পানি দিতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিটি চারায় পৃথকভাবে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে

সার ব্যবস্থাপনা: প্রতি গাছে টিএসপি সার ৪০০ গ্রাম,এমওপি সার ৪০০ গ্রাম,ইউরিয়া সার ৫০০ গ্রাম ও গোবর ১৫ কেজি প্রয়োগ করতে হয়।সার তিনভাগে যার প্রথম কিস্তি মধ্য ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক মাসে,২য় কিস্তি মধ্য মাঘ থেকে মধ্য ফাল্গুন মাসে এবং৩য় কিস্তি মধ্য জৈষ্ঠ্য থেকে মধ্য আষাঢ় মাসে প্রয়োগ করতে হয়।

অঙ্গ ছাঁটাই : গাছের গোড়ার দিকে জল শোধক শাখা বের হলেই কেটে ফেলতে হবে। এছাড়া গাছের ভেতরের দিকে দুর্বল ডালপালা মধ্য কার্তিক (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) মাসে ছাঁটাই করে দিতে হবে। ডালপালা ছাঁটাই করার পর কর্তিত স্থানে বোর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে ছত্রাক আক্রমণ করতে না পারে। ডালপালা ছাঁটাই করলে গাছ আলো বাতাস ঠিকমতো পাবে। ফলে গাছে ফলন বৃদ্ধি পায়।

 

 

পানি সেচ  নিষ্কাশন : খরা মৌসুমে ২-৩ বার সেচ প্রয়োগ করা দরকার। লেবু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না তাই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের সময় গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেজন্য নালা করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

জারা লেবুর পোকামাকড়  রোগ ব্যবস্থাপনা : সিলেট অঞ্চলে লেবু ফসলে প্রায় ১৬ প্রজাতির পোকামাকড় আক্রমণ করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো লেবুর প্রজাপতি পোকা, লিফ মাইনার, সাইলিড বাগ, থ্রিপস, ছাতরা পোকা, কা- ছিদ্রকারী পোকা। এসব পোকামাকড় লেবু ফসলের ক্ষতিসাধন করে।

লেবুর প্রজাপতি পোকা : লেবুর প্রজাপতি পোকার কীড়া পাতার কিনারা থেকে খাওয়া শুরু করে। এ পোকা মূলত নার্সারিতে ও ছোট গাছে আক্রমণ করে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি, জুলাই ও আগস্ট মাসে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। প্রতিকার হিসেবে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে। সম্ভব হলে ডিম ও কীড়াসহ পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। আলোক ফাঁদ দ্বারা পূর্ণাঙ্গ পোকা ধরে মেরে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে কচি পাতায় স্পর্শ ও পাকস্থলী বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ ইসি) অথবা অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ  (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি, কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১ গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

লেবু পাতার ছোট সুড়ঙ্গকারী পোকা : লিফ মাইনার বা সুড়ঙ্গকারী পোকার কীড়াগুলো পাতার উপত্বকের ঠিক নিচের সবুজ অংশ খেয়ে আকা-বাঁকা সুড়ঙ্গের মতো সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গাছের পাতার কিনারার দিক মুড়ে পুত্তলিতে পরিণত হয়। আক্রমণের মাত্রা তীব্র হলে গাছের পাতা কুঁকড়ে যায় ও বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে ঝরে পড়ে। আগস্ট ও অক্টোবর মাসে এ পোকার আক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। প্রতিকার হিসেবে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে। সম্ভব হলে ডিম ও কীড়াসহ পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। গ্রীষ্ম ও শরৎকালে নতুন পাতা গজানোর সময় কচি পাতায় স্পর্শ ও পাকস্থলী বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ ইসি) অথবা অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি, কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১ গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে।

 

 

লেবুর থ্রিপস পোকা : লেবুর থ্রিপস পোকা লেবুর কচিপাতা ও কচি ফলের রস চুষে খায়। আক্রান্ত পাতা ওপরের দিকে বেঁকে নৌকার মতো আকৃতি ধারণ করে এবং পাতা খসখসে ও পুরু হয়ে যায়। আক্রান্ত ফল বড় হওয়ার সাথে সাথে ধূসর বা রুপালি বর্ণের দাগ পড়ে এবং খসখসে হয়ে যায়। প্রতিকার হিসেবে সাদা আাঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে কচি পাতায় স্পর্শ ও পাকস্থলী বিষ (সাইপারমেথ্রিন ১০ ইসি, ফেনিট্রোথিয়ন  ৫০ ইসি) অথবা অন্তর্বাহী বা প্রবাহমান বিষ (ডাইমেথয়েট ৪০ ইসি, কার্বোসালফান ২০ ইসি) জাতীয় কীটনাশক ২ মিলি/লিটার পানি বা ১ গ্রাম/লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন পরপর ৩-৪ বার গাছে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া আক্রান্ত গাছে ফিপ্রোনিল ১ মিলি হারে মিশিয়ে অথবা ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে। অ্যাডমায়ার ২০০ এসএল বা টাফগর ৪০ ইসি ২মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১৫ দিন অন্তর ২/৩ বার স্প্রে করতে হবে।

লাল পিঁপড়া : লাল পিঁপড়া কয়েকটি পাতা একত্র করে বাসা তৈরি করে। এতে গাছের পাতা নষ্ট হয়ে যায় এবং সালোক সংশ্লেষণ ব্যাহত হয়। এসব বাসায় মিলিবাগ আক্রমণ করে, ফলে গাছে শুটিমোল্ড রোগের প্রাদুর্ভাব হয়। গাছ থেকে পিঁপড়ার বাসা অপসারণ করতে হবে। প্রয়োজনে সেভিন ৮৫ এসপি ২ মিলি/লিটার পানি বা ডারসবান ২০ ইসি ২ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে পিঁপড়ার বাসায় প্রয়োগ করতে হবে।

লাল মাকড় : লাল মাকড় লেবুজাতীয় ফলের কচিপাতা ও ফলে আক্রমণ করে। এদের আক্রমণে পাতার নিচের দিক বাদামি বর্ণ ধারণ করে। পাতা কুঁকড়ে যায় ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আক্রমণের প্রথম দিকে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যে কোনো মাকড়নাশক যেমন ভারটিম্যাক বা ওমাইট ৫৭ ইসি ১.৫ মিলি লিটার প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে।

ছাতরা পোকা : সাধারণত গ্রীষ্মকালে এ পোকা শাখা প্রশাখা, পাতার নিচের দিকে এবং ফলের বোঁটার কাছে একত্রে গাঁদা হয়ে থাকে। পূর্ণাঙ্গ পোকা ও নিম্ফ পাতা, ফল ও শাখা প্রশাখা থেকে রস চুষে খায়। এ পোকা থেকে নিঃসৃত পদার্থে শুটিমোল্ড নামক ছত্রাকের জন্ম হয়। আক্রমণের প্রথম দিকে পোকাসহ আক্রান্ত পাতা/কা-/ফল সংগ্রহ করে ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তাছাড়া প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম সাবান পানি মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

তাছাড়া পোকার জন্য জৈব বালাইনাশক হিসেবে বাইকাউ-১ প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৪ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করুন। পাতার এপিট ওপিট এবং ১০-১২ দিন অন্তর কয়েক বার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

জারা লেবুর রোগ ব্যবস্থাপনা

ক্যাঙ্কার : এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ। কচি পাতা, বাড়ন্ত কুঁড়ি, পাতা ও ফলে এ রোগের আক্রমণ বেশি হয়। আক্রান্ত পাতার উভয় পাশে খসখসে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষত অংশের চারদিকে গোলাকার হলুদ কিনারা দেখা যায়। পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে এবং আক্রান্ত ডগা ওপর দিক থেকে মরতে থাকে। ফলের ওপর আক্রমণ বেশি হলে ফল ফেটে যায় ও ঝরে পড়ে। ঘন ঘন বৃষ্টি হলে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত বাতাস জনিত কারণে ও লিফ মাইনার পোকার আক্রমণে গাছের ডাল ও পাতায় যে ক্ষতের সৃষ্টি হয় তার ভেতর দিয়ে রোগ জীবাণু প্রবেশ করে এ রোগের সৃষ্টি করে।

প্রতিকার : পরিকল্পিতভাবে পরিচ্ছন্ন চাষাবাদের মাধ্যমে জাড়া লেবুর বাগান স্থাপন করতে হবে। রোগের প্রাদুর্ভাব প্রকট হলে কুপ্রাভিট ৮০ ডব্লিউপি (কপার অক্সিক্লোরাইড) প্রতি লিটার পানিতে ৭ গ্রাম হারে ১০-১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। বোর্দোমিশ্রণ (১০০ গ্রাম তুঁতে ও ১০০ গ্রাম চুন লিটার পানিতে মিশিয়ে) ৭-১০ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

স্ক্যাব : লেবুর চামড়ার ওপর ছোট ছোট বাদামি বা লালচে বাদামি দাগ দেখা যায়। এ দাগগুলো দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে খসখসে হয়ে যায় যা দেখতে অনেকটা দাদ রোগের মতো মনে হয়। কিছু কিছু দাগ গভীর হয় আবার কিছু কিছু দাগ বাইরের দিকে খাঁড়া থাকে। এ রোগ ব্যবস্থাপনায় ম্যানকোজের জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম হারে ১০-১৫ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে।

রফতানিযোগ্য লেবু উৎপাদন করতে লক্ষণীয় দিক

– রোগ এবং পোকামাকড়মুক্ত লেবু উৎপাদন করতে হবে।

– রোগের ক্ষেত্রে ক্যাঙ্কার রোগটি আমদানিকারকদের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর তাই কোনোক্রমেই বাগানে ক্যাঙ্কার রোগ থাকতে পারবে না।

– পোকার ক্ষেত্রে বাগানটি অবশ্যই থ্রিপস এবং লিফ মাইনার মুক্ত হতে হবে।

– লেবু তোলার সময় অবশ্যই হাতে গ্লোবস পরতে হবে। লেবু তোলার পর বাছাই করতে হবে। লেবু তোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিপক্ব এবং কম পরিপক্বতাকে পরিহার করতে হবে। রঙ এবং আকৃতি অবশ্যই আকর্ষণীয় হতে হবে।

 

 

পেয়ারা

শ্রেণীবিন্যাস

বৈজ্ঞানিক নাম: পিসিডিয়াম গুয়াজাভা    উত্স: আমেরিকা

 

পরিবার: মির্তাসেই            ক্রোমোজোম সংখ্যা: ২ন=  ২২

 

ভূমিকা: পেয়ারা খুবই জনপ্রিয় ফল। এটি সারা বছর পাওয়া যায়৷ সামান্য যত্নে নিশ্চিত ফসল দেয়। উৎপাদনের খরচ কম। পুষ্টি মূল্য অনেক বেশি। অতএব, এটি পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য একটি আদর্শ ফল। পুষ্টির মূল্য: পেয়ারা অনক খাদ্য গুন সমৃদ্ধ যমন ভিটামিন সি, এ, রিবোফ্লাভ এবং খনিজ (ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং লোহা),

ফলর বৈচিত্র্য : ১) লাল শাশ জাত, যমন- রড় ফ্লস, বানারসি সুরক্ষা, ২) সাদা শাশ জাত, যমন- এলাহাবাদ সফদা, এল-৪৯

মাটি  জলবায়ু : ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় জলবায়ু উপাযুক্ত । সহনশীল গাছ, তাই প্রায় সব ধরনর মাটিত জন্মাত পার । পি এইচ. ৬.৫-৮.৫ ও দাআশ মাটি বানিজ্যিক চাষর জন্য প্রয়াজান ।

জাতঃ লক্ষনউ-৪৯, হারিজা, এলাহবাদ সাফেদা, বারুইপুর, থাজা, দুধখাজা, ছিত্তিধার ইত্যাদি।

উন্নত  সংকর জাতঃ অর্ক মৃদুলা, অর্ক অমূল্য, এলাহাবাদ সুরক্ষা, ললিত, পন্থ প্রভাত, কোহির সফেদা, হিসার সফেদা, ধারিধার ইত্যাদি।

অরকা মৃদুলা (নির্বাচন এলাহাবাদ সফেদা): উদ্ভিদ- আধা জোরালো, ফল- গোলাকার, ত্বক মসৃণ এবং হলুদ, ১৮০ গ্রাম, সাদা মাংস, টি অস অস ১২ºব্রিক্স, নরম বীজযুক্ত, পেকটিন ১.০৪%, জেলি তৈরির জন্য ভাল

এলাহাবাদ সুরখ: ফলের চামড়া আপেল রঙ, মাংস গোলাপী রঙ, মিষ্টি, ফেভ বীজ। খুব আকর্ষণীয় ফল কিন্তু শেলফ লাইফ কম।

আরকা অমূল্য (এলাহাবাদ সফেদা x ট্রিপ্লয়েড): উদ্ভিদ- মাঝারি শক্তি, ফল- গোলাকার, ত্বক মসৃণ ও হলুদ, ১৮০- ২০০ গ্রাম, সাদা মাংস, টি অস অস ১২° ব্রিক্স, নরম বীজযুক্ত।

ললিত: অ্যাপল কালার জাতের অর্ধ-সিব জনসংখ্যা থেকে ললিত নির্বাচন, এইচ ডি পি এবং মেডো বাগানের জন্য উপযুক্ত, ফলের ত্বক জাফরান হলুদ লাল ব্লাশ সহ, মাংস গোলাপী এবং দৃঢ়, ১৮৫-২০০ গ্রাম, টি অস অস ১২ºব্রিক্স,  ভিটামিন সি- ২৫০ মিলি গ্রাম / ১০০ গ্রাম  । 

সি আই এস এইউজি : ফল গাঢ় লাল রঙের, আকর্ষণীয় আকৃতি, কয়েকটি নরম বীজ। শীতকালে (১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কম), ফলের খোসার আকর্ষনীয় রঙ বিকশিত হয়।

শ্বেতা: আপেল  কালারের হাফ-সিব জনসংখ্যা থেকে নির্বাচন, ফল- গ্লোবস, ত্বক ক্রিমি সাদা, মাংসের তুষার সাদা, ২২৫ গ্রাম, টিএসএস ১২.৫-১৩.২° ব্রিক্স, ভিট সি-৩০০ মিলিগ্রাম / ১০০ গ্রাম

চারা তৈরী (প্রপাগসান)  রাপন: বর্ষা কাল শাখা কলম তৈরী করা হয় । এর জন্য ২০০০-৩০০০ পি পি এম আই বি এ হরমান ব্যবহার কর হয় ।  এলা বা রুট-স্টক তৈরী করত বীজ থক চারা তৈরী কার হয় ।

গর্তর মাপ : ৬০ x ৬০x৬০ সমি.

চারা বসানার দুরত্ব : ৪-৬ x ৪-৬ মি.

সাভাবিক দুরত্ব : ৬ মি × ৬ মি, হক্টর ২৭৭ টি গাছ।  ফলন ৫-৭ টন/হ। 

হাই ডনসিটি প্লান্টিং  মিডা অরচাডিং

হাই ডনসিটি প্লান্টিং : ৬ মি (সারি থক সারি) ৩ মি (গাছ থক গাছ), হক্টর ৫৫৫ টি গাছ; ফলন ৭-১০ টন/হ ৩ মি (সারি থক সারি) ৩ মি (গাছ থক গাছ), হক্টর ১,১১১ টি গাছ; ফলন ১০-১৫ টন/হ

মিডা অরচাডিং বা আলট্রা হাই ডনসিটি প্লান্টিং: ৩ মি (সারি থক সারি) ১.৫ মি (গাছ থক গাছ), হক্টর ২,২২২ টি গাছ; ফলন ১৫-২০ টন/হ।

পরিচর্যাঃ ট্রনিং ও প্রুনিং: ভালো ফলণ পেতে হলে পেয়ারা গাছের নিয়ম মতো ট্রেনিং ডাল ছাটা দরকার। এর মূল উদ্দেশ হল পেয়ারার সক্তপে কাঠামোর গাছ তৈরি করা যাতে ঝড় বা ফলের ভারে ডাল ভে না পড়ে। তা ছাড়া ট্রেনিং এর ফলে বাগাণ পরিচর্যার সুবিধে এবং গাছ অনেক দিন ফল দেয়।

সাভাবিক দুরতুর বাগানর ক্ষত্র গাছ বসানোর প্রথম ৪ বছর ট্রেনিং ক হয়। ১ম বছরে প্রধাণ কাণ্ডের নিচ থেকে জন্মাণো অবাঞ্ছিত ড কিংবা জোড়-কলমের গাছের নিচ থেকে জোণ্মাণো অবাঞ্ছিত ড ছেঁটে ফেলা হয়।

২য় বছরে প্রধাণ কাণ্ডে মাটি থেকে ২-৩ ফুট উপরে ৩-৪ সবল ডাল রেখে বাকি ডাল ছেঁটে ফেলা হয়। এই ডালগুলি প কাণ্ডের চারিদিকে ছড়িয়ে স্থায়ী কাঠামো তৈরি করা হয়। তা ছাড় ওই উচ্চতার নিচ থেকে কোনো ডাল বের হলে তা ছেঁটে ফে হয়।

৩য় বছরে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে কাঠামোর ডাল থেকে যেস থাড়াই লকলকে ডাল বার হয় তা ছেঁটে ফেলা হয় এবং যেস সমান্তরাল মজবুত ডাল বের হয়, তা রেখে দেওয়া হয়। এই রাহু ডালগুলি পরবর্তীতে ফুল দেবে।

৪থ বছরে কাণ্ডের গোড়া ও শিকড় থেকে গজানো ডাল ছাঁ হয়। সেইসঙ্গে শুকনো ডাল থাকলে ছেঁটে দেওয়া হয়।

সার  সচ প্রয়াগ : প্রতিটি ফলন্ত গাছে বর্ষার আগে ও পরে প্রতিবারে ২৫ কেজি জৈবসার, ১৩০ গ্রাম না. (২৯০ গ্রাম ইউরিয়া), ১৬০ গ্রাম ফ. (১ কেজি সি. সু. ফশফেট) ও ১৩০ গ্রাম পটাশ (২১৫ গ্রাম মি. পটাশ) দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ৫০ গ্রাম জিঙ্ক সালফট, ২০ গ্রাম বারান্স, ২ গ্রাম অ্যামানিয়াম মলিবডট জৈবসারর সাথ মিশিয় ২-৩ বছর অন্তর গাছ প্রতি প্রয়াগ করা হয়।

শীত কাল ৭:১০ অন্তর ও গ্রীস্মকাল ৫-৭ দিন অন্তর বাগান আল বধ বা গাছর গাড়ায় বসিন কর সচ দিত হয়

আধুনিক পদ্ধতি – ড্রিপ সচ জলর অপচয় কমায় ও ফলন বাড়ায়।

পয়ারার ফুল  ফল নিয়ন্ত্রন:  সাধারণত বছরে ৩বার কূল-ফল ধরে।

(1) ফাল্গুন-বৈশাথে (Feb-Mar) ফুল ধরে আষাড়-ভাদ্রে (July-Aug) ফল তোলার উপযুক্ত হয়।

(2) আষাঢ়-শ্রাবণ (July) ফূলে অঘ্রাণ-মাঘে (Nov Jan) ফল ধরে এবং

(3) আশ্বিন-কার্তিকের (Oct) ফূলে ফাল্গুন-চৈত্র (Feb) ফল ধরে।

বর্ষার ফলের স্বাদ পানসে এবং কম পেকটিন যুক্ত এবং শীত ও বসন্তের ফলের চেয়ে নিম্নমানের।

গাছের পরিচর্যার পরিবর্তন ঘটিয়ে ফূল আসার সময়ের পরিবর্তন করা যায়। • তবে বিষয়টি পেয়ারার জাত, মরশুম, স্থান ও মাটির রসের উপর নির্ভর করে।

শীতে ফল পাওয়ার জন্যে চৈত্র-বৈশাথ থেকে সেচ বন্ধ করে জ্যৈষ্ঠের প্রথমে বাগানের মাটি খুঁড়ে আলগা করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পরে গাছের ফল, ফূল ও কিছু পাতা ঝরে পরে। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সুপারিশ মাত্রার সার প্রয়োগ করে সেচ দেওয়া হয়।

ফূল ঝরানোর জন্যে বিশেষ পদ্ধতি নিতে হয়। হাত দিয়ে ছিঁড়ে কিংবা হরমোন (আলফা ন্যাফথলিণ অ্যাসেটিক অ্যাসিড ১০০-২০০ মিগ্রা প্রতিলিটার জলে) স্প্রে করা হয়। • পেয়ারার ফূল নতুন প্রষাথায় আসে। অসময়ে বেশী ফুল-ফল পেতে লম্বা লম্বা ডান বাঁকিয়ে অন্য ডালের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয় কিংবা ডালের ডগায় ওজন ঝুলিয়ে বাঁকানো হয়।

ফলে কিছুদিন এর মধ্যে ডালের বাঁকানো অংশের কাছ থেকে নতুন প্রষাথা ছেড়ে, টাতে ফুল-ফল ধরে।

 

 

পঁপ চাষ

শ্রেণীবিন্যাস

বৈজ্ঞানিক নাম:  ক্যারিকে পাপায়া    উত্স: আমেরিকা

পরিবার: ক্যারিক্যাসেই              ক্রোমোজোম সংখ্যা: ২ন= ১৮

 

ভূমিকা:

জাত : রাচি, ওয়াশিংট, কুর্গ হানিডিউ, সালা সানরাইজ, কা-২, পুসা ম্যাজস্ট্রি, পুসা ডায়ার্ফ, প্রভুতি৷

বীজ সংগ্রহ  চারা তৈরি : বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান বা উন্নত জাতর পাকা পঁপ থক বীজ সংগ্রহ করা হতে পারে।

পাকা পঁপ থক বীজ সংগ্রহ করে ছাইয়ের সঙ্গে রগড় নিত হয়।

তারপর জল ধোয়ার সময় ভস-ওঠা বীজ গুলা সংগ্রহ করে সরাসরি বানা যায় বা পলিথিন প্যকট ভর ৪-৫ মাস রাখা হয়।

বিজতলায় বা লিথিন প্যাকেট রাপন কর ৭-৮ সপ্তাহ চারা তৈরি করা হয়।

চারা রাপন : ১.৮ মি x ১.৮ মি দূরত্ব, প্রতি ৯ টি স্ত্রীফুল গাছ পিছু ১ টি পুরুষ ফুলযুক্ত গাছ রাপন করত হব ।

১০০% স্ত্রীফুল গাছের ক্ষেত্রে প্রতি গাছেই ফল আসে।

সার প্রয়াগ  সচ :বসানার সময় প্রতি গর্ত ৫ কেজি জৈবসার, ১০০ গ্রাম নাইট্রোজেন (২২০ গ্রাম ইউরিয়া) , ৫০ গ্রাম ফসফেট (৩১০ গ্রাম এস এস পি) ও ১৫০ গ্রাম পটাশ (২৮০ গ্রাম এম ও পি) প্রয়োগ করুন।

প্রতি ৩ মাস অন্তর এই পরিমান সার প্রতি গাছ দিত হব ।

নিয়মিত হাল্কা সচ দিন, জমিত নিকাশি ব্যবস্থা রাকত হব ।

রাগপাকা  প্রতিকার :

গাড়া পচা রাগ : কান্ডর গায় জল ভজা দাগ দখা যায়। আক্রান্ত স্থান পচ যায়, দুর্গদ্ধ বর হয় ও গাছ ঢল পড়।

গাছর গাড়ায় জল জমত দওয়া যাব না।

চারা বসানার সময় ২ কজি ট্রাইকাডার্মা ভিরিডি ৫০ কজি জৈব সারর সঙ্গ মিশিয় এক একর জমির মাদাত দিত হব। কপার অক্সি-ক্লারাইড (৮ গ্রাম/লি) স্প্র করুন।

কপার অক্সি-ক্লারাইড (৮ গ্রাম/লি) স্প্র করুন।

কুট রাগ : পাতা কুঁকড় যায়, পাতায় হলদ নকশা দাগ দখা যায় । আক্তাত্ত গাছ ফল ধর না আক্তাত্ত গাছ তুল ফল দিন। বাকি গাছ স্প্র করুন। ডাইমিথায়ট (২ মিলি/লি) বা মিথাইল ডিমটন (২ মিলি/লি) বা ইমিডাক্লাপ্রিড (০.২ মিলি/লি) বা ফিপ্রানিল (১ মিলি/লি) ।